রজনীগন্ধা
পরিচিতি
ফুলের নামঃ রজনীগন্ধা
ইংরেজী নামঃ Tube rose
বৈজ্ঞানিক নাম: Polianthyes tuberosa
পরিবারঃ Amaryllidaceae
রজনীগন্ধা একটি জনপ্রীয় ফুল। সারা বছরই বাজারে এ
ফুলের চাহিদা বেশী থাকে এরং সারা বছরই এ
ফুল চাষ হয়ে থাকে। তবে শীতকালে কিছুটা কম ফোটে। বাংলাদেশের
বিভিন্ন জেলায় এ
ফুলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।
ব্যবহার
সামাজিক ও
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এবং কাট ফ্লাওয়ার হিসাবে ফুলদানী সাজাবার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এফুলের নির্যাস হতে সুগন্ধিও তৈরী হয়ে থাকে। বাজারে
ডাটাসহ ও
কুচা ফুলের কদর সমান
উৎপাদন মৌসুম
মার্চ- এপ্রিল মাস কন্দ লাগানোর উপযুক্ত সময়।
জাত
ফুলের বৈচিত্র্য অনুযায়ী তিন ধরনের রজনীগন্ধা ফুল দেখতে পাওয়া যায়। সিঙ্গল,
সেমি ডাবল, ডাবল।একসারি পাপড়িযুক্ত সিঙ্গল জাতের গন্ধ বেশী, চাহিদাও বেশী। সেমি ডাবল ফুলে ২-৩ সারি পাপড়ি হয়ে থাকে এবং উহা মাঝারী ধরনের গন্ধযুক্ত। ডাবল ফুল ৩
সারি পাপড়িযুক্ত হয়ে থাকে এবং উহাদের গন্ধও তুলনামুলকভাবে কম হয়ে থাকে।
বংশবিস্তার
রজনীগন্ধার কন্দ লাগিয়ে বংশবৃদ্ধি করা হয় ।
জমি তৈরী ও সার প্রয়োগঃ
প্রথম চাষের সঙ্গে প্রতি বিঘা জমিতে ৩
টন জৈবসার বা খামারের সার মিশাতে হবে এবং ৪-৫বার গভীরভাবে
চাষ দিয়ে অগাছামুক্ত করতে হবে ও
জমির মাটি ঝুরঝুরে ও
সমান করতে হবে। শেষ চাষের আগে প্রতি বিঘাতে ১৪:২৮:২৮ ইউরিয়া, টিএসপি,এমপি সার মূল সার হিসাবে জমিতে মিশতে হবে ।
এঁটেল মাটিতে ১০%
সার কম দিলেও চলে। ২ মাস পর হতে প্রতি ২
মাস অন-র
অন-র৭ কেজি ইফরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরীর কাজ চারা লাগাবার অন-তঃ ১৫
দিন আগে শেষ করতে হবে।
টবে চাষের ক্ষেত্রে ২
ভাগ মাটি, ১
ভাগ পাতা পচা সার, ১
ভাগ পচা গোবর সার মিশিয়ে টব ভরে নিতে হবে। একটি টবে ২টি
কন্দ লাগানো যায়।
কন্দ বা চারা লাগানো
রজনীগন্ধার কন্দ লাগিয়ে বংশবৃদ্ধি করা হয় ।
২.৫-৩ সেমি. ব্যাসের কন্দ জমিতে লাগানোর জন্য উপযুক্ত। প্রতি ৩ বছর অন-র
জমির কন্দ পরিবর্তন করা উচিত। বীজের জন্য নির্বাচিত ঝাড় তুলে পরিষ্কার করে ছায়াচ্ছন্ন জায়গায় পাতলা করে বিছিয়ে রাখতে হবে। লাগাবার
কয়েকদিন আগে আরেকবার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কওে পানিতে ধুয়ে নির্বাচিত কন্দ পৃথক করে নিতে হবে এবং ৩-৪ দিন ছায়াতে ছড়িয়ে রাখতে হবে।
কন্দ শোধন
উক্ত কন্দ প্রতি লিটার পানিতে ৪
গ্রাম ব্লু কপার ও
১মিলি. ম্যালাথিয়ন মিশ্রিত পানিতে ২৪
ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে পানি ঝরিয়ে ২-৩ দিন ছায়ায় শুকিয়ে জমিতে লাগাতে হবে।
রোপন দুরত্ব
৩০ সেমি. ক্ম৩০
সেমি. বা ৪০ সেমি. ক্ম৩০
সেমি. দুরত্বে লাগাতে হবে ।
প্রতি ৫-৬ সারি অন-র
১
সারি ফাঁকা রাখলে যাতয়াত, পরিচর্যা ও
বর্ষাকালে নিকাশী নালা হিসাবে করা যাবে। টবের ক্ষেত্রে ১টি
টবে ২টি
কন্দ লাগানো যায়।
পরিচর্যা
ও সেচ
লাগানোর ২০-২৫ দিন পর হতে নিয়মিত নিড়ানী দিয়ে জমি আগাছামুক্ত করতে হবে। প্রয়োজন
হলে হালকা সেচ দিতে হবে ।
প্রতেক বার সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে। গরমকালে
প্রয়োজন মত ১০-১৫ দিন অন-র
সেচ দিতে হবে।
টবের ক্ষেত্রে কন্দ অংকুরিত হওয়া পর্যন- টবে মাটি ভিজে রাখতে হবে। এরপর ভিজে থাকলে অংকুর পচে নষ্ট হতে পারে। তাছাড়া
ফুল আসার সময় ও
মাটি ভেজা থাকলে ফুল আসতে দেরী হয়। শীতকালে
১০
দিন পর ও
গ্রীস্মকালে ৭
দিন পর পর সেচ দিতে হয়।
রোগ
পোকামাকড়ঃ শুঁয়াযুক্ত ও
শুঁয়াহীন ল্যাদাপোকা কচিপাতা ও
কুড়ি খেয়ে ফসলের ক্ষতি করে থাকে এবং গোড়া পচা, শিষ ঢলিয়া পড়া, পাতায় হলুদ দাগ, পাতা শুকিযে যাওয়া ইত্যাদি রোগের প্রকোপে রজনীগন্ধার ক্ষতি হতে পারে।
পোকা দমনের জন্য ০.২% ম্যালাথিয়ন
এবং রোগ দমনের জন্য ০.১% কার্বেন্ডাজিম
বা ০.২৫% ম্যানকোজেবের
জলীয় দ্রবণ সেপ্র করতে হবে
ফসল তোলা
ফসল লাগানোর পর হতে ৩
বছর পর্যন- রজনীগন্ধা ভাল ফুল দিয়ে থাকে। এরপর হতে ফলন কমতে থাকে ও
ফুলের মান কমতে থাকে।এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বও মাস পর্যন- ভাল মানের, বেশী পরিমান ফলন পাওয়া যায়। শীতকালে
ফলন কমে যায়।দ্বিতীয় বৎসর সবচেয়ে বেশী হয়ে থাকে। একটি ভাল শিষে ৩০
জোড়া ফুল তাকতে পারে। কুচা ফুলের জন্য ফুল ফোটার একদিন আগে বিকালবেলা কুঁড়ি তোলা উচিত। ফুল ফুটে গেলে বাজার মূল্য কমে যায়।
ফলন
প্রতি বিঘাতে ১ম
বৎসর প্রায় ৮-১০ কুইন্টাল
কুচা ফুল পাওয়া যেতে পাওে। ২য় বৎসর উক্ত ফলন হতে পাওে ১৪-১৬ কুইন্টাল
এবং ৩য়
বৎসর ৭-৮ কুইন্টাল